মহাভারতে কী কী তথ্য চিত্রিত আছে যা আজও প্রাসঙ্গিক ?
-
- €3.99
-
- €3.99
Publisher Description
মহাভারত হলো ইচ্ছার গর্ভ থেকে উৎসারিত হওয়া জ্ঞানের , এই মহাকাব্য হলো জীবনের মর্ম শিক্ষার, মনুষ্যত্বের ধর্ম শিক্ষার, পাঁক থেকে উঠে এসে পদ্ম হয়ে ওঠার শিক্ষার ,যা জীবন দর্শন সম্পর্কে, মানুষের সম্পর্কে, যুদ্ধ সম্পর্কে এমনকি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সন্ধানের সম্ভবনার দিক নির্দেশ করে এবং যা আজও প্রাসঙ্গিক । এখানেও লুকিয়ে রয়েছে মানবসভ্যতার ইতিহাস, যা বিস্ময়কর ভাবে জ্ঞান, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদির ক্ষেত্রে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে । ইচ্ছা ,আশা, প্রত্যাশা ,আকাঙ্ক্ষা এ সবই তো মানব সমাজের চালিকা শক্তি। নিজের ইচ্ছাই নিজের জীবনের ব্যাখ্যা। মহাভারত আমাদের শেখায় যে কর্ম কি এবং কোনটা শুভকর্ম ও কোনটা মন্দকর্ম অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেমন ধর্ম; সত্য প্রকাশ করাও তেমনি ধর্ম। সত্য চেপে যাওয়া এবং অন্তরে বৈষম্য পোষণ করা কোন ধর্ম নয়। বংশীয় বর্ণবাদ যারা ধর্মের নামে ধরে রাখে এবং রেখেছে, তারা অধার্মিক ও পাপী। সমাজের স্বার্থেই তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত। এখানে প্রতিটি গল্পই জ্ঞানের উৎস এবং মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে শেখার ব্যবস্থাপনা । মহাভারতের প্রতিটা চরিত্রই শিক্ষণীয় । একটি জমির জন্য একটি পরিবারের মধ্যে লড়াই হোক বা একটি ' অবৈধ ' সন্তানের বিষয় একটি পরিবার এবং সমাজের উপর তার প্রভাব এই অসাধারণ মহাকাব্যে বেশ সুন্দরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে.। দুর্ভাগ্যবশত আজও ভারতীয় সমাজ এই মহান মহাকাব্য যে জীবনে জ্ঞানের মুক্তো দেয়, তা বুঝতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে । দুর্ভাগ্যবশত ,একটি সমাজ হিসেবে এখনো একটি সমঝোতার যথার্থ মূল্য বুঝতে ব্যর্থ , যে কারণে নিজেদের ক্ষুদ্র অহংকার এবং লোভ নিজেদের যুক্তির পথে আসে এবং এর ফলে নিজেরা যথাযথ সমাধান পাওয়ার জন্য আপস করতে রাজি হন না ।
মহাভারত ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মাথা এবং ভারতের ঐতিহ্য ।মহাভারত ভাল-মন্দের কথা নয়, এটা মানুষের কথা, তাদের ব্যক্তিগত জটিলতার কথা, তাদের ভাবনা চিন্তার কথা যা জীবন দর্শন সম্পর্কে, মানুষের সম্পর্কে, যুদ্ধ সম্পর্কে এমনকি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সন্ধানের হদিশ বা সম্ভবনার দিক নির্দেশ করে এবং যা আজও প্রাসঙ্গিক ।মহাভারত আমাদের শেখায় যে মৃত্যু সবার হবে কারণ যাদের জন্ম হয়েছে তাদের মৃত্যু হবেই এবং এটাই অবশ্যম্ভাবী। এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম। মহাভারতের অসংখ্য মূল্যবান সাংসারিক পাঠ রয়েছে । আমরা যখন কর্ণ-র জীবনের দিকে তাকাই, তখন বুঝতে পারি দয়ালু, নম্র ও উদার হওয়া এই পৃথিবীতে যথেষ্ট নয় । কৃষ্ণের মতো বন্ধুদের নিঃশর্ত সমর্থন বিস্ময়ের কাজ করতে পারে । কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি প্রাপ্য পায় না; এর জন্য একজনকে লড়াই করতে হয় । যাঁরা অর্জুনের মতো সারা জীবন শিখবেন , তাঁরা অসম্ভব কিছু লাভ করবেন । অনেক সময় ভীষ্ম , বিদুর , দ্রোণ -এর মতো বন্ধুদের রূপে শত্রু আসে । অভিমন্যু চক্রব্যূহ কাহিনী আমাদের শেখায় অর্ধজ্ঞান , না জানার চেয়ে বিপজ্জনক হতে পারে । একলব্যের থেকে আমরা শিখতে পারি যে কেউ কারও আকাঙ্ক্ষাকে আটকাতে পারবে না । মহাভারতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সাংসারিক শিক্ষা হলো যে জীবন যাপনের কৌশল, পরিকল্পনা ও পদ্ধতির গুরুত্বকে বোধগম্য করা । এতে চিন্তার নতুন দিগন্ত খুলে যায় এবং সত্য-এর আবহমান মুহূর্ত ধরা পড়ে । এই কারণেই মহাকাব্য আজও প্রাসঙ্গিক । মহর্ষি ব্যাসের বুদ্ধির কাছে আমাদের মাথা নত করতে হবে । রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ একইভাবে এই লেখাটির সঙ্গে পরিচয় করে, কারণ এটি তাদের নিজস্ব চিন্তা প্রক্রিয়া এবং কর্মের প্রতিধ্বনি করে । মানুষের উচ্চাকাঙ্খা, বস্তুগত সুখভোগের অবিশ্বাস্য তীব্রতা, ক্ষমতা বা শক্তির স্পৃহা , অন্যকে আয়ত্ত করার বাসনা, মানুষের প্রকৃতির ভাল-মন্দ-সব কিছুকে ঘিরে ধরে সাহিত্যের এই বিস্ময় গাথা চলতেই থাকে । মহাভারত কখনও শেষ হয় না। এই গল্পের প্রধান নীতিটি ছিল যে, অসৎ স্বল্প মেয়াদী বিজয় লাভ করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত, সৎ সব সময় জয়লাভ করবে ।