ফুয়ানকা Fuanka
-
- 3٫99 US$
-
- 3٫99 US$
وصف الناشر
আমি নীলা, গতকাল মারা গিয়েছিলাম। মারা যাবার ঘন্টাখানেক পর আবার বেঁচে উঠেছি। বাড়ির লোকজন এখন ডাক্তারকে গাল- মন্দ করছেন। বেচারা ডাক্তার অল্পবয়সী একজন সুদর্শন পুরুষ। সদ্য ডাক্তারি পাস করে এই এলাকায় একটা চেম্বার খুলে বসেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এহেন বিপত্তিতে পড়বেন দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। এলাকার কয়েকজন ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, এই ডাক্তারের কাছে রোগী নিয়ে তারা কিছুতেই যাবেন না। জ্যান্ত মানুষকে মরা বলে দিল, এ কেমন ডাক্তার!
হয়েছে কি, গতকাল দুপুরে কলেজ ছিল না। ছুটির দিন বলে আমি একটু ভাত ঘুমের চেষ্টা করেছিলাম। সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি হওয়ায় ওয়েদারটা ঠান্ডা। পর্দা টেনে ঘরটাকে আরও ছায়া ছায়া করে ফেললাম। তারপর ফুল স্প্রিডে ফ্যান ছেড়ে একটা পাতলা সুতি চাদর গায়ের ওপর টেনে দিয়ে শুয়ে পড়লাম, হাতে বই। ভূতের গল্প সমগ্র। একটা গল্প সবে শুরু করেছি হঠাৎ চেহস্ট পেইন শুরু হলো। আমার একুশ বছরের জীবনে এরকম ব্যাথা এর আগেও হয়েছে। আব্বা আমাকে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ইসিজিও করিয়েছেন। রিপোর্ট নরমাল ছিল। ডাক্তার কিছু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে বিদায় করেছিলেন।
কাল ব্যাথাটা টের পেয়ে প্রথমে বিরক্ত লেগেছিল। আয়েশ করে একটু শুয়েছিলাম, উঠে ওষুধ খেতে হবে ভাবতেই ভালো লাগছিল না। কিন্তু উঠতে গিয়ে অনুভব করলাম, পেইনটা এতো বেশি যে নড়তে পারছি না। মনে হচ্ছে হাজারটা সুঁই কেউ ক্রমাগত পুশ করছে আমার হৃৎপিন্ডে। আস্তে আস্তে সুঁই এর সংখ্যা আরও বাড়তে লাগলো। আমার শরীর প্রচন্ড গরম হয়ে উঠেছে। যেরকম গরম হয় দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা মোবাইল, সেরকম। আমি কুল কুল করে ঘামছিলাম। শ্বাস নিতে পারছিলাম না। বাতাসের জন্য মুখ হা করার সাথে সাথে টের পেলাম যে শুধু বাতাস নয় আমার শরীর পানিও চাচ্ছে। প্রচন্ড তৃষ্ণায় মনে হলো বুকের মধ্যে আস্ত একটা মরুভূমির অস্তিত্ব আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মা ঘরে ঢুকলেন। আমার মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ হচ্ছিল। মা ছুটে এসে পাশে বসলেন। ব্যাকুল হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছু বললেন, কিন্তু তিনি কি বললেন আমি শুনতে পেলাম না। মনে হলো প্রচন্ড ধারালো নখ দিয়ে কেউ খামচে ধরলো আমার হৃৎপিন্ড। তারপর উপড়ে নিলো। চোখ অন্ধকার হয়ে এলো।
আর তারপরই দেখলাম আমি সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক এই একুশ বছরের আমি না। ফ্রক পরা সাত বছরের নীলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বুকের তীব্র ব্যাথাটা অনুভব করছি না আর কিন্তু খুব বিষন্ন আর মনখারাপ লাগছে। আমি কাঁদছিলামও। চোখের পানি গাল বেয়ে নামতেই তার নোনা স্বাদ ঠোঁটে টের পেলাম।